কবিতা:-জ্যোতির্ময়
কবি:-ডঃদেবেশ ঠাকুর
আবৃত্তি:- মেধা নাগ
বাংলা কবিতা আবৃত্তি
বাংলা কবিতা
জ্যোতির্ময়,
দেবেশ ঠাকু্র ,
পুটুঠাকুমার পোশাকি নাম যে জ্যোতির্ময়ী
নির্বাচনের দিন ছাড়া কেউ জানত না
গ্রীষ্মের দুপুরের মত শূন্য সিঁথির বিপুল বৈধব্য নিয়ে
কত মায়াবী সকাল মুছে যায়
কেটে যায় কত নিস্তরঙ্গ ভোর
সাদা থান,সাদা সিঁথি, নগ্ন হাতে শ্বেত অন্ধকার
আদিগন্ত সাদা কুয়াশা ভেজা জীবন
তবু পুটু ঠাকুমা রঙ ভালবাসত
রঙের টানা ভরণ দেখে নিশ্চিন্তে বলে দিত,
‘বোধহয় বর্ষা এসে গেল’ –
পলাশের প্রথম কুঁড়ি ফোটার আগেই জানিয়ে দিত,
ফাগুন আসছে পিচকিরিতে রঙ ছুটিয়ে’।
এমনি মনোরম একজোড়া চোখ ঠাকুমার।
ওপাড়া থেকে নন্দু এসে বসতো ঠাকুমার দাওয়ায়
অন্ধ ছেলেটির চোখে শুধুই রাধার নীলাম্বর
কিংবা মৃত্যুর মত কালো এলোচুল
নন্দু জানতে চাইতো , ‘অশোকের কুঁড়ি ধরেছে ঠাকুমা?’-
‘-গন্ধ পাচ্ছি যেন আকাশের রামধনু নেমেছে মহুয়া বনের দিগন্তে’-
‘-কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসেছে সেই পথভোলা নীলকণ্ঠ পাখি’-
নন্দু গান শোনাত ঠাকুমাকে,
‘আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায় তাই না হারায়’
ঠাকুমা ভাসত চোখের জলে,
‘আলোকধারা যে চোখেও দেখলি না বাপ,
দেখলি না কালো মেঘের কোলে সাদা বক ভেসে গেলে
তুলি খুঁজে পান না যামিনী রায়’-
নন্দু জেদ করতো, ‘এবার দোলে কিন্তু একটা পিচকিরি কিনে দিতে
হবে’।
‘-সে নাহয় দিলাম। রঙ দিবি কাকে?’
‘-তোমাকে। রঙে রঙে ভিজিয়ে দেব তোমাকে’।
দোলের পিচকিরি কিনতে গিয়ে ঠাকুমা
চোখদুটো দান করে এল।
যেন তাঁর মরণের পর এই চোখে রঙ দেখে নন্দু।
জায়েরা বলে, ‘করছ কি!পরজন্মে যে কানা হয়ে জন্মাবে’।
পুটু ঠাকুমার হাসিতে ঝিলিক মারে রঙবাক্সর পৃথিবী
তারপর
অনেকগুলো দিনের পর
নন্দু পুটু ঠাকুমার চোখে আকাশ জুড়ে রামধনুর খেলা দেখে
আর পড়ন্ত বিকেলের নিকেল করা মোমবাতি রঙ
বলতে ভুলে গেছি,
এখন ওকে নন্দু বলে ডাকলে খুব রাগ করে।
‘নন্দু কেন? জানো না আমার নাম?’
‘-কি?’
-‘জ্যোতির্ময়’।
Poetry:- Jyotirmoy
Poet:- Dr. Debesh Thakur
Recitation:- MEDHA NAG
Bangla Kobita Abritti
Bengali Recitation
Advertisement